আমাদের সময় : অনেকটা আকস্মিকভাবে নিউইয়র্ক গেলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে তিনি এ সফর করছেন।
সংস্থাটির সদর দপ্তরে আগামীকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় একটি বৈঠকে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মির্জা ফখরুল দলের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একাধিক নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাত পৌনে ২টায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন মির্জা ফখরুল। তার সঙ্গে রয়েছেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল। আগামীকাল বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় সংস্থাটির রাজনীতিবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মিরোস্লাভ জেনকার সঙ্গে তাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
এ বৈঠকে অংশ নিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্যের আজ বুধবার ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে। এ ছাড়াও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির লন্ডন থেকে নিউইয়র্কে গিয়ে বৈঠকে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, এ সফরে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠক হতে পারে।
বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আলোচনার বিষয়বস্তু আগামী জাতীয় নির্বাচন হলেও দেশের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরবে প্রতিনিধি দল। এ জন্য একটি লিখিত বক্তব্য তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন পত্রিকার খবর ও ছবিও উপস্থাপন করা হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, তার মুক্তি প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়া এবং হত্যা, গুম, নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানির বিষয়টিও জাতিসংঘকে অবহিত করা হবে।
বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে রাজি হননি। কয়েকজন নেতা বলেন, বিষয়টি তারা জানেনই না।
গত ২৪ আগস্ট জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষে রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ জেনকা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বরাবর একটি চিঠি পাঠান। এতে জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফরে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে দলের নেতাদের জাতিসংঘের সদর দপ্তরে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
সূত্র জানায়, গত সোমবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে একজন নেতা জাতিসংঘ মহাসচিবের চিঠির প্রসঙ্গ তুললে মির্জা ফখরুল বিষয়টি স্বীকার করেন এবং নেতাদের এ বিষয়ে অবহিত করেন।
জানা গেছে, তারেক রহমান বৈঠকের বিষয়টি দেখভাল করছেন। এ নিয়ে দলের মহাসচিবসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তিনি। বৈঠকের সার্বিক দিক সম্পর্কে তাকে জানাতে মির্জা ফখরুল পরে লন্ডনেও যেতে পারেন।
বিএনপি নেতারা মনে করছেন, জাতিসংঘের সঙ্গে এ বৈঠক সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করবে। জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এ বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তারা। নেতাদের মতে, জাতিসংঘ ও কমনওয়েলথের তত্ত্বাবধানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নজির রয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমানে প্রেক্ষাপটে এবার সে ধরনের নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন।
জাতিসংঘে বৈঠকে আগামী সাধারণ নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতাকেই বেশি প্রাধান্য দেবে বিএনপির প্রতিনিধি দল। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে জাতিসংঘের তখনকার দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর দূতিয়ালি এবং সে সময় সরকার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও নতুন নির্বাচন না দেওয়ার কথা তুলে ধরে এবার নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়া হবে বলে দলীয় সূত্রে ধারণা পাওয়া গেছে।
কয়েক মাস ধরে কূটনৈতিক পর্যায়ে বিভিন্ন আলোচনায় বিএনপি নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতা চাইছে। সম্প্রতি কমনওয়েলথ মহাসচিবের বৈঠকেও বিএনপি একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছে। এ সময় ১৯৯৬ সালে কমনওয়েলথের বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টিপেনের নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দূতিয়ালির ভূমিকার বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
পাঠকের মতামত: